ভারতের চলচিত্র 'নাইন মান্থস থ্রু' প্রমান্যচিত্রের মাধ্যমে তিনি বলেন, "একজন মানুষ আরেকজন মানুষের প্রতি এমন নারকীয় আচরণ করতে পারে তা অবিশ্বাস্য! আমরা সবাই ঈশ্বরসৃষ্ট এক বিশাল পরিবারের ভাই-বোন। তাই এসব নিজের পরিবারের আপনদের সহযোগিতায় বিশ্বের মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে।"
অগাবগা আমাদের কথা বাদই দিলাম, স্বয়ং পোপও এমন কথা আন্তরিকভাবে ভাবেন, বিশ্বাস করেন কিনা, এই নিয়ে আমার ঘোর সন্দেহ আছে।
একাত্তরের ডিসেম্বরে মাদার তেরেসা খুলনা ও ঢাকার কয়েকটি ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। ওখানে তিনি দেখেন, পাকসেনারা কী পশুর তান্ডব চালিয়েছে। এসব ক্যাম্পে পাকসেনারা বাংলাদেশের নারীদের উপর দিনের পর দিন অত্যাচার চালিয়ে আসছিল। কেবল তাঁদের নগ্ন করেই রাখত না, অভাগীরা যাতে লম্বা চুল পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করতে না পারে এই ভাবনায় তাঁদের চুল কেটে দিত। এসব ক্যাম্পে তিনি কাউকে পাননি কিন্ত দেখেছেন তাদেঁর ছেঁড়া চুল, ব্যবহৃত পোশাক।
ঢাকায় তিনি খোলেন দ্য মিশনারিজ অভ চ্যারিটির শাখা। তখন বেশিরভাগ যুদ্ধ-শিশুদের ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া হত। তেমন কেউ এদের নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিল না, নিজেদের কাছে, এমকি দেশেও রাখতে চাইছিল না।
বঙ্গবন্ধু (আহমদ ছফা ভিন্ন মত পোষণ করতেন) পর্যন্ত নীলিমা ইব্রাহিমকে বলেছিলেন, 'আপা, এই দেশে পিতৃপরিচয় যাদের নেই সবাইকে পাঠিয়ে (প্রবাসে) দেন। মানুষের সন্তান মানুষের মত বড় হোক। তাছাড়া ওই দুষিত রক্ত আমি এদেশে রাখতে চাই না।' (সূত্র: আমি বীরাঙ্গনা বলছি, নীলিমা ইব্রাহীম)।
মাদার তেরেসা পরম মমতায় ওইসব যুদ্ধ-শিশুদের কোলে তুলে নিতে থাকেন। তাদের পাঠিয়ে দেন কলকাতা, ফ্রান্স, সুইডেনে। এই কারণে তিনি বাংলাদেশে তীব্র রোষের সম্মুখীন হন, জোর বলাবলি হতে থাকে, এইসব যুদ্ধ-শিশুদের তিনি খ্রীস্টান বানিয়ে ফেলবেন। তেরেসা তখন থেমে থাকেননি। তাঁর কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন, গোপনে।
*আংশিক তথ্যঋণ: মেহেদী হাসান নাদিম
No comments:
Post a Comment