কপালের ফের। একদা একজন আমাকে পাকড়াও করলেন। তিনি রাগী গলায় বললেন, ‘ওই মিয়া, তুমি বলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়া ছাতাফাতা লেখ। কাট পেস্ট, কপি পেস্ট করো, বিষয় কী!’
আমি বিনীতভাবে বললাম, ‘কাট পেস্ট জিনিসটা কি? বইয়ের পাতা কেটে মনিটরে লাগিয়ে দেয়া নাকি!’
উনি রাগে লাফাতে লাগলেন, ‘তুমি মুক্তিযুদ্ধ নিয়া যা লেখো ওইসবই কাট পেস্ট। ওইসব দিয়ে বাচ্চাদের ইয়ে ফালাইতেও কাজে লাগবে না।’
আমি চিঁ চিঁ করে বললাম, ‘ও আচ্ছা, ওগুলোর কথা বলছেন। দেখুন, সাড়ে তিন লাখ পৃষ্ঠা থেকে বাছাই করে গবেষকরা পনের হাজার পৃষ্ঠায় যে দলিলপত্র দাঁড় করিয়েছেন; ওখান থেকে, ওইসব উপাত্ত নিয়ে আমি লেখি। এটলিস্ট, পনের হাজার পৃষ্টা থেকে বাছাই করে আমাকে লেখতে হয়!’
উনি বললেন, ‘তাতে কিছুই যায় আসে না; ওইসব পুরনো কাহিনী লিখে লাভ নাই, নতুন কিছু লেখো।’
আমি বিভ্রান্ত, ‘আমি কি বানিয়ে বানিয়ে নতুন করে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা লিখবো?’
উনি অসহিষ্ণু, ‘অবশ্যই লেখবা, যেমন করে আমি নতুন করে রবীন্দ্র সঙ্গীত লিখছি। তুমিও নিজে কিছু লেখো। নকলবাজী করে লাভ নাই। নতুন করে মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাত্কার নাও।’
তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার নাম আমাকে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘এর সাক্ষাত্কার নাও, তাইলেই বুঝবা মুক্তিযুদ্ধ কি জিনিস?’
আমি খুব মুগ্ধ হলাম। বাহ, কী তার মনন, ইনি নিজেই রবীন্দ্র সঙ্গীত লিখছেন। এমন দুঁদে মননশীল লাখে কয়টা মেলে! নাহ, ইনার কাছ থেকে যে কোনভাবে একটা সার্টিফিকেট বাগাতেই হবে। ওই মহান মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাত্কার নিতেই হবে, ছাড়াছাড়ি নাই!
গেলাম। ওই নামধারীর সাক্ষাত্কার নিতে।
চ্যাংড়া টাইপের এক পোলাকে আমি বললাম, ‘তোমার বাবাকে ডেকে দাও। ওনার একটা সাক্ষাত্কার নেবো।’
চ্যাংড়া পোলা দুর্দান্ত রাগে লাফিয়ে উঠলো, ‘ওই, মুখ সামলে কথা বলেন, কাকে কি বলছেন, আমিই সেই মুক্তিযোদ্ধা।’
আমি তো তো করে বললাম, ‘সরি, আপনিই সেই ব্যক্তি আমি বুঝতে পারিনি। আসলে আপনার বয়স দেখে বুঝতে পারিনি।’
চ্যাংড়া মুক্তিযোদ্ধা, ‘বয়স দিয়া কি হইবো, যুদ্ধ করার জন্য বয়স কোন বিষয় না। যে কোন বয়সেই যুদ্ধ করা যায়।’
আমি চোখ কপাল থেকে নামিয়ে বললাম, ‘না মানে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল তো, এটা ২০০৮। আপনার বয়সটা ঠিক মিস খাচ্ছে না।’
চ্যাংড়া মুক্তিযোদ্ধা, ‘আরে কি মুসিবত, আপনে বয়সের পেছনে লাগছেন কেন? আপনি কি ঘটক পক্ষিভাই? আমার বিবাহের জন্য আসছেন, যে বয়স নিয়া ফালাফালি করতাছেন। শোনেন, আমি ওই সময় মাতৃগর্ভে ছিলাম।’
আমার মাথা ঘুরছিল, ‘বলেন কি, মায়ের পেটে থেকে যুদ্ধ করেছেন?’
চ্যাংড়া মুক্তিযোদ্ধা বিরক্ত, ‘ইয়েস, আপনের কুনু অসুবিধা?’
আমি টলে উঠে বললাম, ‘না, মানে দয়া করে বলবেন কি, ঠিক কি ভাবে যুদ্ধটা করলেন, অস্ত্রশস্ত্র...।’
চ্যাংড়া মুক্তিযোদ্ধা খেপে গিয়ে বললেন, ‘আরে, আপনি তো বড়ো যন্ত্রণা করেন! এখন আমি মায়ের পেট থিক্যা বাইর হয়া গেছি, এখন আর নমুনা দেখাতে পারুম না। টেম নাই! যান, গিয়া লিখা দেন, আমিই দেশ স্বাধীন করছি! ওভার এন্ড আউট!’
*শুভ'র ব্লগিং থেকে নেয়া।
No comments:
Post a Comment