Search This Blog

Wednesday 6 October 2010

নিধন: ড. আবুল খায়ের

ড. আবুল খায়ের ছিলেন ভারী আত্মভোলা টাইপের মানুষ।
একদিনের ঘটনা। তিনি নিজেই গাড়ী চালিয়ে যাচ্ছেন। সিগনালের লাল বাতি দেখে গাড়ী থামালেন। লাল বাতী সবুজ হলো । সবুজ থেকে আবার লাল হলো কিন্তু এই আত্মভোলা মানুষটা গাড়ী থামিয়ে চুপচাপ গাড়ীতে বসে আছেন, ভুলেই গেলেন তাকে আবার গাড়ীটা চালাতে হবে।
কিন্তু আল বদররা এই আলাভোলা মানুষটাকেও ক্ষমা করেনি!

ড. আবুল খায়েরের ফ্ল্যাট ছিল নীচ তলায়। ১৪ ডিসেম্বর। সকাল ৮টা। ঘুমাবার পোষাক পায়জামা, শার্ট পরেই তিনি পায়চারী করছেন। এই আলাভোলা মানুষটা এমন, তাঁর গায়ের চাদরটা যে তাঁর স্ত্রীর এটা আর খেয়াল করেননি!
ভাবছিলেন, কারফিউ উঠে গেলেই তিনি পরিবারের সবাইকে নিয়ে এখান থেকে অন্য কোথাও চলে যাবেন- তাঁর স্ত্রী বারবার তাগাদা দিচ্ছিলেন।

এমনি সময় আল বদরের লোকজনরা এসে হাজির হলো। তারা তাঁকে ওই পায়চারি করা অবস্থায় ধরে নিয়ে গেল।

আলবদরদের সঙ্গে তাঁর কি কথা হয়েছিল, তা কেউ শোনেনি! ড. আবুল খায়ের তাঁর স্ত্রীকেও কিছু বলে যেতে পারেননি! 
*তথ্যসূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ। 

(ওই মানুষটার শেষ কথা আমরা জানি না, জানা হবে না আর কখনও।
যদিও ঢাকায় এখন পোকা-মাকড়ের মত গিজগিজ করছে মানুষে কিন্তু ঢাকা এখন একটা মৃত-নগরী! ঢাকা নামের লাশটায় এখনও পচন ধরেনি কারণ এটা ফরমালিনে চুবিয়ে রাখা হয়েছে। কেউ কোন দিন এটাও দেখবে না, ঢাকা শহরের রাস্তা ফাঁকা-ফাঁকা! কিন্তু ঈদের মতো সময়টাতে কে জানে হয়তো ফাঁকা-ফাঁকা রাস্তা দেখা যেতেও পারে।
কিন্তু যেটা কেউ কখনও দেখবে না, সিগনালের বাতী লাল থেকে সবুজ হচ্ছে, সবুজ থেকে লাল কিন্তু একটা গাড়ী থেমে আছে। থেমেই আছে! ভেতরে একজন মানুষ স্টিয়ারিং ধরে বসে আছেন, বসেই আছেন, চুপচাপ। আলাভোলা, বুদ্ধিদীপ্ত একজন মানুষ, যার চোখগুলো অসম্ভব ঝকঝকে- যার চোখে আটকে থাকে গোটা সুর্যটা!)

No comments: