Search This Blog

Saturday 25 April 2009

মুক্তিযুদ্ধে, একজন আহমদ ছফা।

বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা কোনটি?
বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা 'প্রতিরোধ'। এই পত্রিকার প্রকাশক, সম্পাদক, প্রচারক ছিলেন আহমদ ছফা।

আহমদ ছফার জবানিতে শুনুন, "শেখ সাহেবের রেসকোর্স মিটিং-এ বিক্রির জন্য আমরা কয়েকজন পত্রিকাটি বার করেছিলাম।...
পত্রিকার একটি কপি আহমদ শরীফের হাতে দিয়েছিলাম। পাওয়ামাত্র চোখ বুলিয়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন। আমাকে জড়িয়ে ধরে ড. শরীফ বলেছিলেন, 'আমার এখন মনে হচ্ছে, আমি এখন পাকিস্তানে না, স্বাধীন বাংলাদেশে আছি। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেছে। তুমি, তুমিই স্বাধীনতার বরপুত্র, নায়কের জন্মদাতা, প্রতিরোধ তার মাধ্যম'।

ড. শরীফ পত্রিকার বিনিময়ে তার পকেটে যত টাকা ছিল সব আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। গুণে দেখেছিলাম, ৯৮ টাকা। সেই সময়ের ৯৮ টাকা, ভাবা যায়!
...প্রতিরোধ পত্রিকাটির বিক্রি ছিল অবিশ্বাস্য! পত্রিকাটি বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে লভ্য দশ হাজার টাকা যুদ্ধ প্রস্তুতি সহায়তা তহবিলে প্রদানের জন্য ফরহাদ মাযহারের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। বেচারা এখন লম্বা লম্বা বুলি ছাড়ে, কিন্তু ঐদিন টাকাগুলো কোথায় কিভাবে হাওয়া করে দিয়েছিল, সে হিসাব আমাকে এখনও দেয়নি।

১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম লেখক সংঘ করে স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তাকে যখন সাহিত্য সংস্কৃতিতে অঙ্গীভূত করার পরিকল্পনায় আমরা মেতে উঠেছিলাম তখন শামসুর রাহমান আমাদেরকে দেশদ্রোহী বলে গালি দিয়েছিলেন।

বাংলা সাহিত্যের বিপ্লব, গৌতম বুদ্ধের ভাষা বিপ্লব। গৌতম বুদ্ধকে আমি ভাষা বিপ্লবী বলি। তিনিই বাংলা ভাষার প্রথম ভাষা সৈনিক। পালি ভাষায় ত্রিপটক রচনা করে তিনি সংস্কৃত ভাষার গ্রাস হতে সদ্যজাত ভাষা বাংলাকে রক্ষা করেছিলেন। নইলে বাংলা বলে কোন ভাষা আমরা পেতাম না। এরপর বায়ান্ন সাল আসল...।"

................................

ছফার মৃত্যুর পর মন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক সিটি কর্পোরেশনকে নিষেধ করে দিয়েছিলেন, যাতে ছফাকে বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে দাফনের অনুমতি না দেয়া হয়।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান আহাদ চৌধুরী বলেছিলেন, 'আহমদ ছফা কে? তিনি কি মুক্তিযোদ্ধা? কোন সেক্টরের যোদ্ধা ছিলেন'?

হায় নির্বোধ, হায় গোডিমওয়ালা বালক! এই বালককে কে বোঝাবে, সব যুদ্ধ স্টেনগান দিয়ে হয় না! একেজনের যুদ্ধ করার ভঙ্গি একেক রকম।

হারুনুর রশীদ আহাদ চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন, 'আহমদ ছফাকে না চেনা অজ্ঞতা, ইতরামি, না ক্রইম? আমি আপনার কাছ থেকে এর উত্তর প্রত্যাশা করি'।

তৎকালিন শাসকদের ছফার প্রতি তীব্র রোষ ছিল কী এইজন্য?

ছফাকে বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে দাফন করা যায়নি। এই নিয়ে বুদ্ধিজীবী মহলে তেমন উল্লেখযোগ্য কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
অথচ ছফার জীবিত অবস্থায় কোন বুদ্ধিজীবীকে এমন অপমান করলে হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের উচ্ছেদের মত আরেকটি ঘটনা না ঘটিয়ে ছাড়তেন না। মৃতের খাটিয়া ধরে বলতেন, শহিদ বুদ্ধিজীবীকে যথাস্থানে সমাহিত করতে হবে, নইলে আমিও তার সাথে কবরে যাব। আমাকেও খাটিয়ায় তোল।

কর্নেল তাহেরকে যখন ফাঁসির আদেশ দেয়া হল, ভয়ে সবাই চুপ, কারও মুখে রা নেই। মনে হয় যেন এটাই হওয়া উচিৎ ছিল। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন ছফা। তিনি তাহেরের ফাঁসির আদেশ রদ করার সপক্ষে জনমত সংগ্রহ ও সরকারকে চাপ দিতে বুদ্ধিজীবীদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে বেরিয়েছিলেন।

আজ যারা বুদ্ধিজীবীর ছাল গায়ে দিয়ে ঘুরে বেড়ান তাদের মধ্যে খুব কম মানুষই আছেন, যিনি ছফার দ্বারা কোন না কোন ভাবে উপকৃত হননি।
আসলে ছফা এই দেশে আগেভাগেই জন্ম নিয়েছিলেন। তাঁর আসার কথা ছিল আরও অনেক কাল বাদে...।

তাঁর অনূদিত 'ফাউস্ট' থেকে ক-লাইন যোগ করি:

"খোদাতালা: অধিক বলার আছে?
নালিশ সে তো তোমার সত্তার অংশ
কিছুই তোমার চোখে ঠেকেনি সুন্দর?
মেফিস্ট: না-হে প্রভু, সত্য কহি
তোমার এ দুনিয়াটা অতিশয় খল
সেখানে মানুষ গেলে
এতো বেশি পাপে ডোবে
শয়তানও বিরক্ত হয় চাতুরি খেলাতে
পাপপুণ্য বোধহীন পামর মানুষ।"

*ছবি এবং আংশিক তথ্যঋণ: মোহাম্মদ আমীন।

1 comment:

Sadiq Alam said...

Ahmed Sofa, ek o odditiyo!