Search This Blog

Monday 19 January 2009

মুক্তিযুদ্ধে: ফাদার মারিনো রিগন।

ফাদার।
ফাদার মারিনো রিগন। ইতালীর নাগরিক। ১৯৫৩ সালে বাংলাদেশে আসেন।

১৯৭১ সাল। মুক্তিযুদ্ধ। তিনি বানিয়ারচর গ্রামের ক্যাথলিক গির্জার প্রধান যাজক। দিনের বেলায় গির্জা, ফাদার মারিনো গির্জার যাজক । কিন্তু ভোজবাজির মত রাতে গির্জাটা হয়ে যেত হাসপাতাল। তিনি গির্জাটাকে রাতের বেলায় বানিয়ে ফেলতেন হাসপাতাল, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে। শত শত মুক্তিযোদ্ধার প্রাণ বাঁচিয়েছেন তিনি, চিকিৎসা করেছেন, খাইয়েছেন। যুদ্ধের নারীকে করেছেন পূর্ণবাসিত। সব ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
১৯৭১-এ রিগন নিয়মিত ডায়েরি-দিনলিপি লিখতেন। তখন তার দিনলিপিতে লিপিবদ্ধ আছে বাঙালীদের উপর পাক-আর্মির নৃশংসতার কথা, রাজাকারদের তান্ডবের বর্ণনা।

একজন হেমায়েতউদ্দিন বীর বিক্রম।
ইনি ১৯৭১ সালে ছিলেন রামশীল গ্রামে দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধার দল হেমায়েত বাহিনীর প্রধান। এই বাহিনীর সঙ্গে পাক আর্মীর তুমুল যুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধে হতাহত হয় পাক আর্মীর ১৫৮ জন। আহত হন হেমায়েত বাহিনীর হেমায়েত। যথারীতি চিকিত্সা করেন ফাদার রিগন। হেমায়েত প্রাণে বেঁচে যান।

পরে হেমায়েত বলেন, ওই সময় আমার চিকিত্সা করে ফাদার নিজের জীবনের উপর ঝুঁকি নিয়েছিলেন। ওই সময় উপরে ছিলেন ঈশ্বর নীচে ফাদার রিগন।

গতবছর তিনি জটিল অপারেশনের জন্য ইতালী যাওয়ার আগে গির্জার লোকজনকে বলে গিয়েছিলেন, ইতালীতে তাঁর মৃত্যু হলে তাঁকে যেন বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়, এখানেই সমাহিত করা হয়।
যাওয়ার আগে তিনি (আশা নাজনীন, প্রথম আলো) ফোনে বলে গিয়েছিলেন জীবনানন্দের ভাষায়, আবার আসিব ফিরে এই বাংলায়, এই ধানসিঁড়ি নদীর তীরে...।

আমরা ফাদার রিগন নামের ৮৩ বছরের এই মানুষটাকে এই ৩৭ বছরে কি দিয়েছি? মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কত লম্বা লম্বা বাতচিত করেছি! আমার জানামতে ২০০৭ পর্যন্ত এই মানুষটিকে নাগরিকত্ব দেয়া হয়নি অথচ তিনি বারবার আবেদন করেছেন তাঁকে নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য, তাঁকে নাগরিকত্ব দেয়া হয়নি। পরের আপডেট আমার কাছে নাই।
আমার লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করে যখন ভিনদেশি অসাধারণ এইসব মানুষদের কাছে আমাদেরকে অকৃতজ্ঞ, নগ্ন করে দেয়া হয়।

হায়রে আইন- হায়রে গাইন। কার জন্য আইন! আইনের মারপ্যাচে গোলাম আযম এই দেশের নাগরিক হতে পারবেন অথচ এই মানুষটা নাগরিকত্ব পাবেন না! কেন? আমরা দুধ বিক্রি করে শুটকি কেনা জাতি বলে?

আফসোস, একজনের নাগরিকত্ব অন্যজনকে দেয়ার নিয়ম নাই। নইলে তুচ্ছ আমি, সীমাহীন আনন্দের সঙ্গে এই মানুষটার জন্য নিজের নাগরিকত্ব ছেড়ে দিতাম, অবলীলায়। আজীবন এই আনন্দ বয়ে বেড়াতাম, অগাবগা আমি, সমস্ত জীবনে অন্তত ভাল একটা কাজ করলাম।
আফসোস, এমনটা নিয়ম নাই।
কিন্তু, দেবদূতের মতো এই মানুষটার চশমার পেছনের ঝকঝকে চোখে চোখ রাখি কেমন করে!

ফাদার ঠিকই বলেছিলেন, ‍‍"যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাঁরাই জয়ী। আমরা যারা বেঁচে আছি তারা স্বাধীনতার সুখ বা সুবিধাভোগী।"

আসলেই আমরা বড় সুবিধাভোগী। ধান্ধাবাজ। ভান করি স্বপ্নবাজের!
*
অবশেষে, ২০০৯-এ মানুষটাকে নাগরিকত্ব দিয়ে, আমরা নিদারুন লজ্জা হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি।

No comments: