Search This Blog

Thursday 28 June 2007

একজন বীরাঙ্গনা, একজন জজ সাহেব, একটি পতাকা

…ফারুক আমাদের কলেজে বি.এ পড়ত। কেমন যেন গোবেচারা বোকা বোকা গোছের। বাবাকে একদিন বলেছিলাম, জানো বাবা ফারুক কখনও মেয়েদের দিকে চোখ তুলে তাকায় না। মা বললেন, অমন ছেলে আজকালকার দিনে হয় না। বাবা বললেন, দ্যাখো গিয়ে ছোটবেলায় মাদ্রাসায় পড়েছে। আমাদের সঙ্গে যে সব মাদ্রাসায় পড়া ছেলে কলেজে পড়তো তারাও মেয়েদের দিকে সোজাসুজি তাকাতো না, কিন্তু সুযোগ পেলে ওরাই সব চেয়ে বেশী হ্যাংলার মতো মেয়ে দেখত। হাসাহাসির ভেতর ফারুকচর্চা শেষ হতো।


…কেমন করে চলে এলো ২৫শে মার্চ । বাবা মায়ের জিদে গ্রামে চলে গেলেন একান্ত অনিচ্ছাসত্বেও। …বাবা আমাদের গ্রামে যাবার জন্য খবর পাঠালেন।

…হঠাৎ একদিন আমার ছোট ভাই অদৃশ্য। ১৭/১৮ বছরের ছেলে। ছোট্ট কাগজে মাকে আর আমাকে লিখে গেল, যুদ্ধে যাচ্ছি, তাড়াতাড়ি দেশে চলে যাও। মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। বললেন, ফারুককে খবর দে।

…আজ রাতেই দেশে চলে যাব।

…ঠিক সন্ধ্যায় ফারুক বলল, খালাম্মা চলে যাচ্ছেন, চলুন আমি পৌছে দিয়ে আসি।

…দু’খানা বেবীট্যাক্সি ডাকা হলো। আমি মার সঙ্গে যাচ্ছিলাম ফারুক আমাকে তারটায় উঠতে বলল। মা আর সোনালী সামনেরটায় উঠল। কিছুদুর যাবার পর আমাদের বেবীট্যাক্সি সোজা স্টেশনের পথে না গিয়ে বাঁ দিকে সেনানিবাসের পথ ধরল।

…চিৎকার করে বললাম, এই বেবী থামো । না, সে তার গতি বাড়িয়ে দিল। আমি লাফ দেবার চেষ্টা। কররাম। কিন্ত ফারুক সঙ্গে গায়ের শক্তিতে না পেরে ওর হাতে আমার সব কটা দাঁত বসিয়ে দিলাম। যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠল পশুটা। তারপর বেবীট্যাক্সি থামিয়ে ওই জানোয়ারটা আমার মুখ বাঁধলো। তারপর সোজা সেনানিবাস। আমি বন্দী হলাম। ফারুক আমাকে উপহার দিয়ে এলো।

ফারুক এখন জজ সাহেব। আর কখনোও হাফ শার্ট পরে না। কেউ হাতের দাগ দেখে ফেললে বলে মুক্তিযুদ্ধে আহত হলেছিল বেয়ানাট চার্জে । দেখুন তাহলে এ দেশে মুক্তিযোদ্ধা কারা!

এরপর সব আমার কাছে দুঃস্বপ্ন… অবশেষে একদিন…। জয় বাংলা ধ্বনি আরও জোরদার হচ্ছে। …
কয়েকজনের মিলিত কন্ঠ, এবারে মা, আপনারা বাইরে আসুন। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা আপনাদের নিতে এসেছি। কিন্তু এত লোকের সামনে আমি সম্পূর্ণ বিবস্ত্র, উলঙ্গ। দৌড়ে আবার বাংকারে ঢুকতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু বিশাল এক পুরুষ, এক শিখ আমাকে আড়াল করে দাড়ালেন, তার মাথার পাগড়িটা খুলে আমাকে যতোটুকু সম্ভব আবৃত করলেন।…

ঋণঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি, নীলিমা ইব্রাহিম
*ছবিটি পোস্টের চরিত্রের না।
**ছবি ঋণঃ নাইবউদ্দিন আহমেদ

No comments: